ইমানের পরিচয় - আল কুরআনের আলোকে আল্লাহ তাআলার পরিচয়

প্রিয় পাঠক বন্ধুগণ, আপনি কি الإِيْمَانُ بِاللَّهِ-এর পরিচয় অথবা আল কুরআনের আলোকে আল্লাহ তাআলার পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আমাদের আজকের এই পোস্টটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। 

আল-কুরআনের-আলোকে-আল্লাহ-তাআলার-পরিচয়
কারন আজকের এই পোস্ট দ্বারা আপনি জানতে পারবেন কিভাবে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে বানিয়েছেন। কি করলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতি খুশি হন।

ভূমিকা

ইসলামে যেসব মূল বিষয়ের উপর বিশ্বাস করতে হয়, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান হলো ইমান বিল্লাহ তথা আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এ বিশ্বজগতের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী মহান আল্লাহ তাআলার নিরঙ্কুশ সার্বভৌমত্বের উপর বিশ্বাস স্থাপন করাই الْإِيْمَانُ بالله তথা আল্লাহ তাআলার প্রতি ইমান। নিচে প্রশ্নালোকে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

الْإِسْمَان بِالله-এর পরিচয়

আভিধানিক অর্থঃ الإِيْمَانُ بِالله একটি مُرَكَّبَ তথা যৌগিক শব্দ। এটি الإِيْمَانُ ও وری الْإِيْمَانُ : 0 1 অর্থ- বিশ্বাস করা, আনুগত্য করা, স্বীকৃতি খাঁড়-এর দুটি শব্দ সমন্বয়ে দেওয়া, “ب” শব্দটি حَرْفٌ جَارٌ আর اَللَّهُ অর্থ- আল্লাহ। সুতরাং اَلْإِيْمَانُ بِالله -এর সমন্বিত অর্থ হলো, আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস।

পারিভাষিক সংজ্ঞাঃ শরিয়তের পরিভাষায়- الْإِيْمَانُ بِاللهِ তথা আল্লাহ তাআলার প্রতি ইমান বলতে বুঝায়, একজন মুমিন এ মর্মে স্বীকৃতি প্রদান করবে যে, আল্লাহ এক। তিনি একক ও অদ্বিতীয়, তিনি সবকিছুর প্রতিপালক ও উপাস্য। এক্ষেত্রে তাঁর কোনো শরিক বা সমকক্ষ নেই এবং তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন; কিন্তু সকল তুর্কি তার মুখাপেক্ষী।
 
আল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে-
قل هُوَ اللهُ أَحَدَّ اللهُ الصَّمَدُ، لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدُ وَلَمْ يَكُن لَن حوا أحد অর্থাৎ, বলুন, তিনি এক আল্লাহ্, অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেট জয় দেয়নি (অর্থাৎ, তার কোনো সন্তান নেই এবং তিনিও কারো সন্তান নন), আর তার সমকক্ষ কেউ নেই। (ইখলাস: ১-৪)

গুণাবলির দিক থেকেও মহান আল্লাহ অদ্বিতীয়। তিনি সকল গুণের আধার। তিনি চিরস্থায়ী। চিরঞ্জীব, শাশ্বত ও সত্য।

আল্লাহ তাআলা, পবিত্র কুরআনে ইমানের পরিচয় বর্ণনা করে ইরশাদ করেন- “রসুল ইমান এনেছেন তাতে, যা তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ হতে তাঁর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুমিনগণও। প্রত্যেকেই ইমান এনেছেন আল্লাহ তাআলার প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রসুলগণের প্রতি”। (বাকারা: ২৮৫)

الْإِيمَانُ بِالله তথা আল্লাহ তাআলার প্রতি ইমান হচ্ছে ইমানের সাতটি রোকনের মধ্যে প্রথম রোকন। প্রতিটি মানুষকে এ রোকনের প্রতি ইমান এনেই ইসলামে প্রবেশ করতে হয়। দ্বীনের অন্যান্য রোকনসমূহের জন্য এ রোকনটি হচ্ছে মূলভিত্তি। এটি যদি সঠিক না হয়, তাহলে পরবর্তী রোকনসমূহের কোনো মূল্য থাকে না। সেজন্য যুগে যুগে সকল নবি ও রসুল তাঁদের উম্মতদেরকে সর্বপ্রথম এ বিশ্বাসের প্রতিই আহ্বান জানিয়েছেন। 

যেমন প্রথম রসুল হজরত নূহ (আ) তাঁর জাতির লোকদেরকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন। يا قوم اعْبُدُوا الله مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهِ غَيْرُهُ অর্থাৎ, হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহ তাআলার ইবাদত করো, তিনি ব্যতীত তোমাদের আর কোনো মাবুদ নেই। (আরাফ: ৫৯)

আল কুরআনের আলোকে الله-এর পরিচয়

১. সুরা বাকারায় মহান আল্লাহ তাআলার পরিচয় অত্যন্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যেমন-
তাঁর সিফাতের মধ্যে রয়েছে, "তিনি আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তিনি চিরস্থায়ী চিরঞ্জীব। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছুই তাঁর। তাঁর অনুমতি নিয়েই কেবল কেউ তাঁর কাছে সুপারিশ করতে পারবে। 

তিনি সামনে ও পিছনে যা আছে সবকিছু জানেন, যা তিনি ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত তার জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর আসন আকাশ ও জমিন পরিব্যাপ্ত, এ উভয় জগতের রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।" (বাকারা: ২৫৫)

২. সুরা হাশরেও আল্লাহ তাআলার পরিচয় সম্পর্কে নিম্নোক্ত আলোচনা রয়েছে-
তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যমান (সকল) বস্তু সম্বন্ধে জানেন। তিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু। তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তিনি মহান অধিপতি, মহাপবিত্র, শান্তিদাতা, নিরাপত্তা-বিধায়ক, সর্বনিয়ন্তা, মহা পরাক্রমশালী, মহাপ্রতাপশালী, মহামহিম। 

তারা (তাঁর সাথে) যা কিছু শরিক করে, তিনি তা থেকে পবিত্র। তিনিই আল্লাহ, মহান সৃষ্টিকর্তা, মহা উদ্ভাবক, প্রকৃত রূপকার। উত্তম নামসমূহ তাঁরই। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, (সবই) তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। তিনি মহাপরাক্রমশালী, অসীম প্রজ্ঞাবান। (হাশর: ২২-২৪)

মহান আল্লাহ তাআলার পরিচয়

الله শব্দের মধ্যেই তাঁর তুলনাহীন বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। মা (আল্লাহ) আরবি শব্দ। পৃথিবীর কোনো ভাষাতেই। শব্দের কোনো প্রতিশব্দ নেই। এই শব্দটির কোনো একবচন বা বহুবচন নেই। এ শব্দের কোনো স্ত্রীলিঙ্গ বা পুংলিঙ্গ নেই। এ শব্দটি একক ও অতুলনীয়। আল্লাহ তাআলাও তদ্রূপ তাঁর সত্তা ও গুণাবলিতে একক ও অদ্বিতীয়। তাঁর সমতুল্য বা সমকক্ষ কিছুই নেই। 

আল্লাহ তাআলা বলেন- هُوَ اللهُ أَحَدُ اللهُ الصَّمَدُ، لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ قُلْ অর্থ: নবি বলুন তিনিই আল্লাহ। একক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন, (সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী) তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউই নেই। (ইখলাস: ১-৪)

আল্লাহ তাআলা স্বয়ংসম্পূর্ণ সত্তা। তিনি অনাদি অনন্ত। তিনি চিরস্থায়ী ও সর্বত্র বিরাজমান। তাঁর কোনো শুরুও নেই, শেষও নেই। তিনি পানাহার, নিদ্রা, তন্দ্রা, ক্লান্তি সবকিছু থেকে মুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন- هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْ شَيْءٍ عَلِيمٌ . অর্থ: তিনিই প্রথম, তিনিই শেষ। তিনিই প্রকাশ্য, তিনিই গোপন এবং তিনিই সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত। (হাদিদ: ৩) 

অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন- هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمَ لَهُ مَا فِي السَّمَوَاتِ اللهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَا ومَا فِي الأَرْضِ. অর্থ: তিনি আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও সর্বসত্তার ধারক। তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে কখনোই স্পর্শ করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর অধীন। (বাকারা: ২৫৫)

আল্লাহ তাআলা সকল গুণের আধার। সকল গুণ তাঁর মধ্যে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান। তিনি সৃষ্টিকর্তা। বিশ্বজগৎ ও এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর সৃষ্টি। তিনি রিযিকদাতা। সকল সৃষ্টিই রিযিকের জন্য তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনিই সর্বশক্তিমান সব কিছুর নিয়ন্ত্রক। সকল কিছুই তাঁর পরিচালনায় সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এককথায় তিনি সর্বগুণে গুণান্বিত। 

তাঁর গুণের কোনো সীমা নেই। সুন্দর ও পবিত্র নামসমূহ একমাত্র তাঁরই জন্য নির্ধারিত। বস্তুত আল্লাহ তাআলা তাঁর সত্তা ও গুণাবলিতে এক ও অতুলনীয়। তাঁর কোনো শরিক নেই। সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য, ইবাদতের যোগ্য সত্তা একমাত্র তিনিই।

মহান আল্লাহ তাআলার অস্তিত্বের প্রমাণ

دَكِيْلُ الْفِطْرَة  মানৰ প্রকৃতি থেকে আহরিত প্রমাণঃ একথা প্রমাণিত যে, প্রতিটি মানব শিশু ছোটকাল থেকেই তার মনের গভীরে একজন সৃষ্টিকর্তা থাকার বিষয়টিকে অনুভব করে। কিন্তু যারা আল্লাহ তাআলাকে স্বীকার করতে চায় না, তাদের না চাওয়ার বিষয়টি সৃষ্টিগত নয়; বরং তা বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের প্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 

মানুষের মধ্যে সৃষ্টিকর্তাকে স্বীকারের মনোভাব এমনিতে হয়নি; বরং তা কুরআন ও হাদিসের বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত। সেই মহান আল্লাহ প্রদত্ত একটি স্বীকারোক্তির পূর্ণফল।

دليل النقل ওহির প্রমাণঃ মানুষ যাতে তাদের হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতিকে পুনরায় ফিরে পেতে পারে সেজন্য আল্লাহ তাআলা ওহির মাধ্যমে তাদেরকে তাঁর সত্তা, গুণাবলি, নামসমূহ ও তাঁর কর্ম সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তিনি যুগে যুগে মানুষের মধ্য থেকে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিদেরকে নবি ও রসুল হিসেবে পাঠিয়ে তাদের নিকট ওহি প্রেরণ করে তাঁর সত্তা, গুণাবলি ও নামসমূহের বৈশিষ্ট্যের পরিচয় তুলে ধরেছেন। 

সকল নবি তাঁদের জাতির কাছেও এসব বিষয়ের আহ্বান জানিয়েছেন। যেমনটি উপরে বর্ণিত আয়াতগুলো আল্লাহ তাআলার পরিচয় ও অস্তিত্বকে প্রমাণ করে। এসব দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তাআলা বলতে যে একজন আছেন বলেই তিনি তাদেরকে এককভাবে তাঁর ইবাদত করতে বলেছেন। আর তিনি বাস্তবে যদি না-ই থাকতেন, তাহলে তাদেরকে এমন নির্দেশ দান করা হতো না।

دليل الفعل (আল্লাহ তাআলার) কর্মের প্রমাণ

তিনি এ কথার দাবি করেন যে, সমগ্র জগতে যা কিছু বর্তমান আছে, এর সবই এককভাবে তাঁরই সৃষ্টি। এসব নিখুঁতভাবে সৃষ্টি করা এবং সুষ্ঠু নিয়মের মাধ্যমে তা পরিচালিত হওয়ার মধ্যেও জ্ঞানীদের জন্য তাঁর অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দানের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করার মতো যথেষ্ট দলিল প্রমাণাদি নিহিত। সৃষ্টিজগতের মধ্যে তাঁর পরিচয় পাওয়ার মতো বহু নিদর্শন বা দলিল প্রমাণাদি রয়েছে। 

বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন- إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتُ لِأُولِي الْأَلْبَابِ. অর্থাৎ, নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং রাত-দিনের আবর্তনের মধ্যে জ্ঞানী মানুষদের জন্য (তাঁর পরিচয় পাওয়ার মতো) অনেক নিদর্শন রয়েছে। (আলে ইমরান: ১৯০)

শেষ কথা

প্রত্যেক সৃষ্টিরই স্রষ্টা রয়েছে। এই বিশ্বজগৎ এমনিতেই সৃষ্টি হয়নি। নিশ্চয়ই এগুলোর একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন। আর তিনি হচ্ছেন আল্লাহ তাআলা। ইবাদতের একমাত্র হকদার তিনি। তাঁর অস্তিত্বকে আমরা ওহির মাধ্যমে, কর্মের মাধ্যমে এবং মানব প্রকৃতি থেকে খুঁজে পাই। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে সবকিছুর একমাত্র মালিক, নিয়ন্ত্রক এবং সর্বগুণে গুণান্বিত হলেন আল্লাহ তাআলা। এগুলোর প্রতি বিশ্বাসকে الْإِيْمَانُ بالله তথা আল্লাহ তাআলার প্রতি ইমান বলে।

প্রিয় পাঠক বন্ধুগন, আশা করি উক্ত পোস্ট পড়ে আপনি আল্লাহ তায়ালার বান্দাদের প্রতি দায়িত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আমাদের উক্ত ব্লগ পোস্ট আপনার কাছে কেমন লেগেছে তা কমেন্ট করে জানাবেন। এবং একটি শেয়ার দিয়ে আপনার বন্ধুদের দেখার ও সব কিছু জানার সুযোগ করে দিবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

শামিম বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url