ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ - ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি
সুস্বাস্থ দেহের জন্য ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ অনেক বেশি কারযকরি। ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি উক্ত পোস্ট দ্বারা আমরা জানব ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি প্রকারভেদ ও ড্রাগন ফলের জমি তৈরি সহ ড্রাগন ফলের বিস্তারিত আলোচনা যা আমাদের জন্য অনেক উপকারি। এর ফলে আমরা নিজে নিজেই ড্রাগন ফল চাষ করতে পারবেন এবং কারো সাহায্য ছাড়াই আপনারা ড্রাগন ফল চাষ করতে পারবেন।
বাংলাদেশে ইদানিং ড্রাগন ফল চাষ করা হচ্ছে। ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ, ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি আমাদের দেশে ড্রাগন ফলের চাষ যা থাইল্যান্ডের ড্রাগন ফলের চাষাবাদের চয়ে ফলন হচ্ছে প্রায় তিনগুণ বেশি।
সূচিপত্রঃ
ভূামকা
বছরের একটি গাছ ৩০ থেকে ৩৫ টি পর্যন্ত শাখা তৈরি করতে পারে। ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি একটি গাছ লাগাবার পর থেকে শুরু করে ১০ থেকে ১৫ মাস পর একটি গাছে ড্রাগন ফল ফল ধারণ করে বা ফল ধরা শুরু করে। এক সময় এই ড্রাগন ফল জাতটি দক্ষি-পূর্ব এশিয়ায় অনেক জনপ্রিয় একটি ফল। মাঝে মাঝে কিছু এসিডিএবং মিলি বাগের আক্রমণ দেখা যায়। ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ, ড্রাগন ফল খুব দ্রুত বাড়ে এবং এটি সব সময় মোটা শাখা তৈরি করে থাকে। ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি আগাছা সফলতার প্রায় শতভাগ তাড়াতাড়ি বাড়ে। কাটিং থেকে উৎপাদিত গাছে ফল ধরতে সময় লাগে ১২-১৫ মাস।
ড্রাগন ফলের প্রকারভেদ
ড্রাগন ফল সাধারণত তিন প্রজাতির হয়ে থাকেঃ-
- লাল ড্রাগন ফল বা পিটাইয়া। এর খোসার রঙ লাল ও শাঁস সাদা। এই প্রজাতির ফলই বেশি দেখতে পাওয়া যায়।
- কোস্টারিকা ড্রাগন ফল। খোসা ও শাঁস উভয়ের রঙই লাল।
- হলুদ রঙের ড্রাগন ফল। এই জাতের ড্রাগন ফলের খোসা হলুদ রঙের ও শাঁসের রঙ সাদা।
বাংলাদেশে উদ্ভাবিত জাতগুলো হলোঃ-
- বারি ড্রাগন ফল।
- বাউ ড্রাগন ফল(সাদা)।
- বাউ ড্রাগন ফল( লাল )।
- বাউ ড্রাগন ফল৩।
ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ
পুষ্টিগুণঃ ভিটামিন-সি, মিনারেল ও উচ্চ ফাইবারযুক্ত একটি ফল। যার ফলে ক্যারোটিণ, প্রচুর ফসফরাস, এসকরবিক এসিড, প্রোটিন, ফিবার, ফ্যাট, ক্যালসিয়াম, আয়রন রয়েছে।
প্রতি ২৫০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য ড্রাগন ফলে যা পুস্টি পাওয়া যায় তা দেওয়া হলো-
- পানি- ২০০-২২৫ গ্রাম।
- শর্করা- ২২.৫-২৫ গ্রাম।
- প্রোটিন- ০.৩৮-১.২৫গ্রাম।
- আঁশ- ০.৮৩-২.২৫ গ্রাম।
- খাদ্যশক্তি- ৮৭.৫-১২৫ কিলোক্যালরি।
- চর্বি- ০.২৫-১.৫ গ্রাম।
- ক্যালসিয়াম- ১৫-২৫ মি গ্রাম।
- আয়রন- ০.৭৫-১.৭৫ মি.গ্রাম।
- ফসফরাস- ৪০-৮৭.৫ গ্রাম।
- ক্যারোটিন- (Vitamin A থায়ামিন বা রিবোফ্লাবিন খুব সামান্য থাকে)।
- ভিটামিন-বি- ০.৫ – ১,১ মি গ্রাম।
ড্রাগন ফলের গুরুত্ব
- ক্যারোটিন সমৃদ্ধ এতে চোখ ভালো রাখে।
- আঁশের পরিমাণ বেশি থাকাযর কারনে হজমে সহায়তা করে।
- তাছাড়া আঁশ শরীরের চর্বি কমায়।
- প্রোটিন শরীরের যাবতীয় বিপাকীয় কাজে সহায়তা করে থাকে।
- ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত করে।
- দাঁত মজবুত করে।
- ভিটামিন-বি৩ রক্তের কোলেস্টেরল কমায় ও ত্বক সুন্দর রাখে।
- ভিটামিন-সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- ত্বক, দাঁত বা চুল ভালো রাখে।
ড্রাগন ফলের রোপণ পদ্ধতি বা রোপণ সময়
সমতল ভূমিতে বর্গাকার বা ষঢ় ভূজাকার ও পাহাড়ি ভূমিতে ড্রগন ফলের কাটিং রোপণ করতে হবে। ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি, ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ ড্রগন ফল রোপণের জন্য উপযোগী সময় হলো এপ্রিল মাস থেকে ওক্টোবর মাস পরয্ন্ত।ড্রাগন ফলের জমি নির্বাচন ও তৈরি
উঁচু ও মাঝারির উঁচু উর্বরতম জমি নির্বাচন করতে হবে এবং জমিতে ২ অথবা ৩ টি চাষ করে ভালোভাবে মই দিতে হবে। ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ, ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি এর পরে সেই জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করতে হবে।
ড্রাগন ফলের প্রনিং ও ট্রেনিং
ড্রাগন ফল খুব দ্রুত বাড়ে এবং এটি সব সময় মোটা শাখা তৈরি করে থাকে। ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি ১ বছরের একটি গাছ ৩০ থেকে ৩৫ টি পর্যন্ত শাখা তৈরি করতে পারে। যা ৪ বছর বয়সী একটি ড্রাগন ফলের গাছে ১২০ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত শাখা প্রশাখা তৈরি করতে পারে। ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ তবে শাখা প্রশাখার উৎপাদন গুলো উপযুক্ত ট্রেনিং ও ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করে। ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি গবেষণা করে দেখা যায় যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ১০ থেকে ১৫ মাস পর একটি গাছে ফল ধারণ করে বা ফল ধরা শুরু করে।
ফল সংগ্রহের পর ৩৫ থেকে ৪০টি প্রধান শাখায় প্রত্যেকটিতে ১টি বা ২টি সেকেন্ডারি শাখা প্রশাখা অনুমোদন করা হয়ে থাকে। ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ, ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি এ ক্ষেত্রে কোয়ার্টারনারী বা টারসিয়ারী প্রশাখাকে অনুমোদন করা যায় না। ট্রেনিং বা প্রনিংকরার পর অবশ্যই যে কোন ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। তানা হলে বিভিন্ন প্রকার রোগবালাই আক্রমণ হতে পারে।
ড্রাগন ফলের বংশবিস্তার
বিভিন্ন পদ্ধতি বা বীজের মাধ্যমে ড্রাগন ফলের বংশবিস্তার থাকলেও মাতৃ গুনাগুণ বজাই রাখার জন্য অঙ্গজ পদ্ধতিতে কাটিং এর মাধ্যমে বংশ বিস্তার করাই ভালো। ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি আগাছা এর সফলতার হার প্রায় শতভাগ ও তাড়াতাড়ি ধরে। কাটিং থেকে উৎপাদিত গাছে ফল ধরতে সময় লাগে ১২-১৫ মাস। ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ, ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি যা সাধারণত বয়স্ক অথবা শক্ত শাখা ১ থেকে ১.৫ ফুট কেটে হালকা ছায়াতে বেলে দোআঁশ মাটিতে গাছের গোড়ার দিকের কাটা অংশ পুতে খুব সহজেই চারা উৎপাদন করা যায়।
তারপর ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে গাছের কাটিং এর গোড়া থেকে শিকড় বেরিয়ে আসে। তখন এটি মাঠে লাগানোর উপযুক্ত হয়। ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি তবে উপযুক্ত পরিবেশে ও প্রয়োজন অনুযায়ী গাছের কাটা কাটিংকৃত কলম সরাসরি মূল জমিতে লাগানো যায়।
জমিতে গর্ত তৈরী ও চারা রোপণ
১ মিটারের মতো আকারের গর্ত করে তা রোদের ভিতরে খোলা রাখতে হবে। ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি গর্ত তৈরির ২০-২২ দিন পর প্রতি গর্তে ২০-৫০ কেজি পচা গোবর, ২০০ গ্রাম টিএসপি, ২০০ গ্রাম এমওপি, ১২০ গ্রাম জিপসাম এবং ৪০ গ্রাম জিংক সালফেট সার গর্তের মাটিতে ভালো করে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে। ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ প্রয়োজনে মটিতে সেচ দিতে হবে।
গর্ত ভরাটের ১০-১২ দিন পর প্রতি গর্তে ৬০ সেমি দূরত্বে ৪ টি করে চারা সোজাভাবে মাঝখানে লাগাতে হবে। ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি চারা রোপণের ১ মাস পর থেকে ১ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি গর্তে ৩ মাস পর পর ১৫০ গ্রাম করে ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।
ড্রাগন ফলের পরিচর্যা
আগাছা অপসারণ করে নিয়মিত সেচ প্রদান করতে হবে। এবং প্রয়োজনে চারপাশে বেড়া দিয়ে ঘেরার ব্যবস্থা করতে হবে। ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ, ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি ২ থেকে ২.৫ মিটার লম্বা হওয়ায় সাপোর্ট দেওয়ার জন্য ৩ থেকে ৪ টি চারার মাঝে ১টি সিমেন্টের লম্বা খুঁটি পুততে হবে। চারা বড় হয়ে গেলে কলার ছোতর বা নারিকেলের রশি দিয়ে বেধে দিতে হবে। ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি যাতে কাণ্ড গুলো বের হলে। গাছ খুটিতে আঁকড়ে ধরে গাছ সহজেই বাড়তে পারে।
প্রতিটি খুঁটির মাথাই একটি করে মটর সাইকেল বা বিভিন্ন গাড়ির পুরাতন টায়ার মোটা তারের সাহায্যে আটকে দিতে হবে। ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ, ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি এরপর গাছের মাথা বা অন্যন্য আগা টায়ারের ভিতর দিতে বাইরের দিকে ঝুলিয়ে দিতে হবে। এভাবে ঝুলন্ত আগাই ফল বেশি ধরে
ড্রাগন ফলের জমিতে সেচ ব্যবস্থাপনা
ড্রাগন ফল খরা বা জলাবর্ধতা সয্য করতে পারে না। সঠিক পরিচর্যার অভাবে ড্রাগন গাছের ফলন তেমন ভালো হয়না। ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ, ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি তাই শুস্ক মৌশুমের জন্য ১০-১২ দিন পর পর সেচ দেওয়া উচিৎ। এছাড়া ফল ধরা গাছে ৩ বার সেচ দিতে হবে।
- ফুল ফোটা অবস্থায় একবার সেচ দিতে হবে।
- ফল মটর দানা অবস্থায় একবার।
- ১৫ দিন পর আরেকবার সেচ দিতে হবে।
ড্রাগন ফলের জমিতে সার প্রয়োগ
গাছের বয়স বাড়ার সাথে নিম্ন উল্লেখিত সারগুলো দিতে হবে-
ড্রাগন ফলের গাছের বয়স | মাদা প্রতি সারের পরিমাণ/বছর | |||
গোবর সার(কেজি) | ইউরিয়া(গ্রাম) | টিএসপি(গ্রাম) | এমওপি(গ্রাম) | |
১-৩ বছর | ৪০-৫০ | ৩০০ | ২৫০ | ২৫০ |
৩-৬ বছর | ৫০-৬০ | ৩৫০ | ৩০০ | ৩০০ |
৬-৯ বছর | ৬০-৭০ | ৪০০ | ৩৫০ | ৩৫০ |
১০ বছের ঊর্ধে | ৭০-৮০ | ৫০০ | ৫০০ | ৫০০ |
ড্রাগন ফলের রোগ বালাই ব্যবস্থাপনা
রোগ ও বালাই ব্যবস্থাপনা করে সেগুলো ব্যাবহার করে। ফলে রোগ বালাই খুবই একটা চোখে পড়ে না। তবে কখনো কখনো এ গাছের মূলপঁচা বা কান্ড ও গোড়া পঁচা রোগ দেখা গিয়ে থাকে। ড্রাগন ফলের রোগ তেমন একটা চোখে পড়ে না। ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ, ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি তাবে কখনো কখনো এই গাছেও রোগ বালাই দেখা যায়। মূলপঁচা, কান্ড এবং গোড়া পঁচা রোগ দেখা যায়।
মূলপচা রোগঃ
- ড্রাগন ফলের গাছের গোড়ায় অতিরিক্ত পানি জমে গেলেৈএর মূল পঁচে যায়।
- মাটির ভিতর গাছের মূল এ রোগের ফলে একটি দুটি করে পচে গাছের সমস্ত মূল পচে যায়।
- মূলপচা রোগের ফলে গাছ উপরের দিকে টান দিলে দেখা যায় মূল ছাড়া শুধু কান্ড উঠে আসে।
- এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে উঁচু জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করতে হবে।
কাণ্ড বা গোড়া পচা রোগঃ
- ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা ড্রাগন ফলের গাছে রোগ হয়।
- এ রোগ হলে গাছের কান্ড হলুদ রং আবার কিছুদিন পরে তা কালো রং ধারণ করে এবং পরবর্তীতে বা শেষে ঐ স্থানে পঁচন ধরা শুরু হয় আর পঁচার পরিমাণ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।
- রোগ দমনের জন্য যে কোন ছত্রা নাশক পানিতে মিশিয়ে ২ গ্রাম প্রতি লিটার প্রয়োগ করতে হবে।
- তাছাড়া, ড্রাগন ফলে মাঝে মাঝে এফিড ও মিলি বাগের আক্রমণ দেখা যায়।
- এফিডের বাচ্চা ও পূর্ণ বয়স্ক পোকা গাছের কচি শাখা এবং পাতার রস চুষে খায়, ফলে আক্রান্ত গাছের কচি শাখা ও ডগার রং ফ্যাকাশে হয় এবং গাছ দূর্বল হয়ে পড়ে।
- পোকা ডগার উপর আঠালো রসের মতো মল ত্যাগ করে ফলে ছত্রাক রোগের সৃষ্টি হয়।
- এতে গাছের খাদ্য তৈরি ব্যাহত হয়। এতে ফুল ও ফল ধারণ কমে যায়।
- পোকা দমনে কীটনাশক প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫ মিলিলিটার যা ৫ কাপ ভালো ভাবে মিশিয়ে স্প্রে করার ফলে সহজেই রোগ দমন করা যায়।
পোকা মাকড়ঃ
ড্রাগন ফলের ক্ষতিকর পোকা মাকড় খুব একটা চোখে পড়ে না, তবে মাঝে মাঝে কিছু এসিডিএবং মিলি বাগের আক্রমণ দেখা যায়। ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ, ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি বাচ্চা ও পূর্ণ বয়স্ক পোকা গাছের কচি শাখা পাতার রস চুষে খায়। যার ফলে গাছের কচি শাখা এবং আগার রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়। এতে গাছ দূর্বল হয়ে যায়। পোকা আগার উপর আঠা যুক্ত রসের মল ত্যাগ করে এর ফলে কালো ছত্রাক রোগের সৃষ্টি হয়।
এতে গাছের খাদ্য তৈরি করতে অনেক সাহায্য করে। ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ, ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি এর ফলে ফুল ও ফল ধারণ ক্খমতা কমে যায়। এ পোকা দমনের জন্য কীটনাশক প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫ মিলিলিটার বা ৫ কাপ ভালো ভাবে মিশিয়ে তার পরে স্প্রে করে সহজেই এ রোগ দমন করা যায়।
ড্রাগন ফল সংগ্রহ ও ফলনঃ
ড্রাগন ফলের কাটিং থেকে চারা রোপন করার পর ১২ থেকে ১৫ মাস বয়সের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। এরফল যখন সম্পূর্ণ লাল রঙ ধারণ করে তখন সংগ্রহ করতে পারে। গাছে ফুল ফোঁটার মাত্র ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়। ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি, ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ বছরে ৫-৬টি পর্যায়ে ফল সংগ্রহ করা যেতে পারে। প্রথম বার জুন থেকে অক্টোবর মাসে। দ্বিতীয় বার ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি।
- ড্রাগন ফল উৎপাদনের পরিমান প্রতি হেক্টর জমিতে ২৮-৩০ টন। ড্রাগন ফলের চারা বপনের ১০-১৫ মাস বয়সে ফল সংগ্রহ করা যায়।
- গাছে ফুল আসার ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে থাকে।
- ফল যখন সম্পূর্ণ লাল রঙ ধারণ করে ঠিক তখন এটি সংগ্রহ করতে হয়। ড্রাগন ফল মূলত মে মাস থেকে শুরু করে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত উৎপাদিত হয়। এটি বছরে ৩ থেকে ৪ টি ফল সংগ্রহ করা যায়।
কি ভাবে ড্রাগন ফল চাষ করবেন
ড্রাগন ফল জাতটি দক্ষি-পূর্ব এশিয়ায় অনেক জনপ্রিয় একটি ফল। ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ, ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি যা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণায় ইন্সিটিউট উদ্ভাবিত ড্রগন ফলের নতুন জাত বা মূলত কোস্টারিকা এবং পিটাইয়া জাত মিলিয়ে তৈরি করে।
তাছাড়া ড্রাগন ফল-১ (সাদা) ,বাউ ড্রাগন ফল-২ ( লাল ), বাউ ড্রাগন ফল-৩ জাতগুলো বাংলাদেশে উদ্ভাবিত হয়। ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ হর্টি কালচার সেন্টার বা নার্সারীতে ড্রাগন ফলের চারা পাওয়া যায়। ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি এর বীজ দিয়ে চারা তৈরী চেয়ে শাখা কলমের মাধ্যমে চারা তৈরী করা উত্তম হবে।
জমি তৈরি ও বপন পদ্ধতি
- ড্রাগন ফল সাধারণত সারা বছরে চাষ করা যায়।
- উঁচু ও উর্বর জমিতে ড্রাগনের ফলন ভালো হয়।
- ড্রাগন চাষ করতে অর্গানি ম্যাটার বেশি ব্রবহার করতে হয়, তাহলে এর ফল খুব দ্রুত বাড়ে।
- সমতল ভূমিতে বর্গাকার এবং ষঢ় ভূজাকার একটি পাহাড়ি ভূমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে ড্রাগন ফলের অগাছা রোপণ করা হয়।
- এপ্রিল মাস থেকে অক্টোবর ড্রাগন ফল বপনের জন্য উপযোগী সময়।
- চারা বপনের আগে ১ মিটার থেকে ১.৫ মিটার আকারের একটি গর্ত করে তা খোলা রোদে রাখতে হবে।
- গর্ত তৈরীর ২০ থেকে ২২ দিন পর প্রতিটি গর্তে ২০ থেকে ২৫ কেজি পচা গোবর, ২০০ গ্রাম টিএসপি, ২০০ গ্রাম এমওপি, ১০০ গ্রাম জিপসাম এবং ৪০ গ্রাম জিংক সালফেট সার গর্তের মাটির সঙ্গে ভালো ভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে।
- প্রয়োজনে মাঝে মাঝে সেচ দিতে হবে।
- গর্ত ভরাটের ১০-১২ দিন পর প্রতি গর্তে ৬০ সেমি দূরত্বে চারটি করে চারা সোজাভাবে মাঝখানে লাগাতে হবে।
- চারা বপনের এক মাস পর থেকে এক বছর পর্যন্ত প্রতি গর্তে তিন মাস পর পর ১২০ গ্রাম করে ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।
- গাছ লতানো ১ থেকে ১.৫ মিটার লম্বা হওয়ায় সাপোর্টের জন্য চারটি চারার মাঝে একটি সিমেন্টের চার মিটার লম্বা খুঁটি দিতে হবে।
টপে ড্রাগন ফল চাষ
- আমাদের দেশে আবহাওয়া ড্রাগন ফল চাষের জন্য অনেক উপযুক্ত একটি যায়গা। তাই চাইলে আপনি আপনার ছাদ বা বাগানে বড় টপেে এবং ড্রামে এই ফল চাষ করতে পারবেন।
- ছাদ বা বাগানে ড্রাগনের চারা প্রায় সব ঋতুতেই বপন করা যায়।
- কিন্তু ছাদে ড্রাগন ফলের ভালো ফলন পেতে হলে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে চারা বপন করা উত্তম।
- ড্রাগন ফল চাষ টবে বা ড্রামে করা যাবে। তবে ২০ থেকে ২২ ইঞ্চি আকারের কোন ড্রাম লাগানো ভালো।
- বড় আকারের ড্রামে ফলন অনেক ভালো হয়।
- খুব সহজেই সব ধরনের মাটিতে ড্রাগন ফলের চাষাবাদ করা যায়।
- ভালো ফলনের জন্য জৈব পদার্থ বেলে দোঁআশ মাটি বাছাই করতে হবে।
- বেলে দোআঁশ মাটি ভালোভাবে পরিস্কার করে নিয়ে পরিমাণ মতো গোবর, ৬০ গ্রাম পটাশ সার ও ৪০ গ্রাম টিএসপি সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
- সার এবং মাটির মিশ্রণের পরিমাণ মতো পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে।
- এরপর বাছাই করা ড্রামে উপকরণ গুলো ৮ থেকে ১০ দিন রাকতে হবে।
- তারপর ড্রামের মাটি ভালো করে দাউল বা কোদাল দিয়ে ঝুরঝুরে করে আবার ৪ থেকে ৫ দিন রাখতে হবে।
- মাটি কিছুটা শুষ্ক হয়ে উঠলে ভালো জাতের আগাছা চারা ড্রামে ও টপে বপন করতে হবে।
- ড্রাগন ফলের গাছে তেমন একটা রোগবালাই ও পোকামকড়ের আক্রমন হয় না।
- পারিপার্শ্বিক ও অন্যান্য যত্ন সব সময় নিতে হবে।
- চারা লাগানোর পর ড্রামটিকে রোদে রাখতে হবে।
- তাছাড়া চারায় পানি দেয়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন গোড়ায় পানি না জমে থাকে।
- ড্রামের ভেতরের বাড়তি পানি সহজেই অপসারণ করার জন্য ড্রামের নিচে ছিদ্র করে দিতে হবে। এতে অতিরিক্ত পানি বাহিরে পড়ে যাবে।
শেষ কথা
মিনারেল ও উচ্চ ফাইবারযুক্ত একটি ফল। ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ সমতল ভূমির উপর বর্গাকার ও ষঢ় ভূজাকার একটি পাহাড়ি ভূমিতে ড্রাগন ফল চাষাবাদ পদ্ধতি কন্টুর পদ্ধতিতে ড্রাগন ফলের অগাছা রোপণ করা হয়। আমাদের দেশের বর্তমান অনেক জনপ্রিয় একটি খাবার হলো ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিগুণ তাই বিভিন্ন চাষিরা এটিকে ব্যাবহার করে অনেক লাভোবান হচ্ছেন। তাই আপনিও অল্প সময়ে লাভবান চাইলে আজই ড্রাগন ফল চাষ করা শুরু করেন। এটি রোপন করার ১২ থেকে ১৫ সপ্তাহের মদ্ধে গাছে ফল আশা শুরু করে।
প্রিয় পাঠক বন্ধুগন, উক্ত পোস্ট দ্বারা আপনার কোন উপকার হলে বা আপনার ভালো লাগলে একটি কমেন্ট করবেন। এবং একটি মেয়রে দিয়ে অপনার বন্ধুদের দেখার সুযোগ করে দিবেন।
শামিম বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url