কবরের শাস্তি ও পুরষ্কার - হাশরের ময়দানের অবস্থা কিরুপ হবে?
কবরের শাস্তি ও পুরষ্কার এবং হাশরের ময়দানের অবস্থা কিরুপ হবে সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে বিভিন্ন ধরনের কুরআনের আয়ত ও হাদিস রয়েছে। কবরের শাস্তি ও পুরষ্কার, হাশরের ময়দানের অবস্থা কিরুপ হবে, মৃত্যুর পর পুনরুত্থান হওয়ার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ইমানের অংশ। এটা চিরন্তন সত্য একটি ব্যাপার।
মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকেই হাশর বলে। হাশরের ময়দানের অবস্থা কিরুপ হবে, আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সবকিছু ধ্বংস করার পর নতুনরুপে সৃষ্টি করবেন। কবরের শাস্তি ও পুরষ্কার, আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির সকল কাজের বিচারকার্য সম্পাদন করবেন। কবরের শাস্তি ও পুরষ্কার, হাশরের ময়দানের অবস্থা কিরুপ হবে, মুনকার নাকিরের সাওয়াল জবাব, মুরকার নাকিরের প্রশ্নের উত্তর সমূহ, মৃত্যুর পর পুনরুত্থান , আখেরাতের উপর ইমান আনার তাৎপর্য সম্পর্কে উক্ত পোস্টে যানতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
ভূমিকা
কবরের শাস্তি ও পুরষ্কার, হাশরের ময়দানের অবস্থা কিরুপ হবে! মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে অনন্তকাল পর্যন্ত যে জীবন চলতে থাকবে তাকে আখেরাত বলে।আখরাতের প্রতি বিশ্বাস ইসলামের আকিদাসমূহের মধ্যে অন্যতম মৌলক শাখা। কবরের শাস্তি ও পুরষ্কার, আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস ইসলামের আকিদাসমূহের মধ্যে অন্যতম মৌলিক শাখা। হাশরের ময়দানের অবস্থা কিরুপ হবে, আখেরাতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ছাড়া ইমান বিশুদ্ধ হয় না। নিচে আখেরাত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
আখেরাতের পরিচয়
আভিধানিক অর্থঃ আখেরাত শব্দটি আরবি শব্দ। আভিধানিক অর্থ হলো-
- পরকাল।
- পরলোক।
- পরজগৎ।
- পরবর্তী সময়।
- শেষ পরিণাম।
- শেষকাল।
পারিভাষিক সংজ্ঞাঃ শরিয়তের পরিভাষায় মানুষের মৃত্যুর পর যে জীবন শুরু হয় তাই আখেরাত। এর যাত্রা কবর থেকে শুরু হয়। যেমন- হাশর, মিযান ও পুলসিরাত ইত্যাদি পথ অতিক্রম করে জান্নাত বা জাহান্নামে প্রবেশ করতে হবে। মৃত্যুর পর এইসকল অবস্থাকেই আখেরাত বলা হয়।
আখেরাতের উপর ইমান আনার তাৎপর্য
১. ইমানের মৌলিক দাবি সমূহঃ আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস করা ইমানের দাবি। মুমিন মুক্তাকিদের পরিচয় সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন- وبالاجرة هم تو قنون অর্থ- তারা আখেরাতের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। (সূরা বাকারা আয়াত নং-৪) আখেরাতকে বিশ্বাস করা ব্যাতিত ইমান পূর্ণ হয় না। অতএব, প্রকৃত মুমিন হওয়ার জন্য আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস একান্ত আবশ্যক।
২. কল্যাণঃ মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- ليس البر ان يولوا وجوهكم قبل المشرق والمغرب ولكن البر من امن باللله واليومالاخر الاخر و الملعكة والكياب والنبيين অর্থ- পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোর মধ্যে কোনো কল্যান নেই। তবে কল্যান আচে আল্লাহ, আখেরাত, ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ ও নবিগনের উপর ইমান আনয়নের মধ্যে।(সূরা বাকারা আয়াত নং-১৭৭)
৩.সত্য মিথ্যার হাকিকতঃ আখেরাতের প্রতি ইমান আনয়নের মাধ্যমে মানবমনে সত্যের প্রতি আনুগত্য ও অসত্যের প্রতি ঘৃনা সৃষ্টি হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন- যারা এ জগতে সৎকাজ করে তাদের জন্য কল্যান রয়েছে ও পরকালের গৃহ আরো উত্তম। মুক্তাকিদের গৃহ কতইনা চমৎকার।
৪. দুনিয়ায় আখেরাতের ক্ষেতস্বরুপঃ নবি করিম (সাঃ) বলেন, দুনিয়া আখেরাতের ক্ষেতস্বরুপ। ইহকালে ভালো কাজ করলে পরকালে পুরস্কার পাবে আর মন্দকাজ করলে শাস্তি পাবে।
মুনকার নাকিরের সাওয়াল জবাব
হাশরের ময়দানের অবস্থা কিরুপ হবে। মুনকার ও নাকির দুইজন সম্মানিত ফেরেশতা। মৃতব্যক্তিকে কবরে রাখার পর তারা তাকে মৌলিক তিনটি প্রশ্ন করবেন।
- তোমার রব কে?
- তোমার দ্বীন কি?
- তোমার নবী কে?
মুরকার নাকিরের প্রশ্নের উত্তর সমূহ
হাশরের ময়দানের অবস্থা কিরুপ হবে যারা পার্থিক জগতে ইসলামের একটিষ্ট অনুসারি ছিলো, তারা খুব সহজে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে।
- ১ম প্রশ্নের উত্তর- ربيالله অর্থ- আল্লাহ আমার রব।
- ২য় প্রশ্নের উত্তর-ديني الاسلام অর্থ- আমার দ্বীন ইসলাম।
- ৩য় প্রশ্নের উত্তর- (نبي محمد(ص আমার নবি হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)।
কবরের পরিচয়
মৃত্যুর পর অনন্তকালের জীবনে প্রথম ধাপ হলো কবর। যাতে বান্দাহ তার আমল অনুযায়ী নেয়ামত সমূহ ভোগ করতে থাকবে। হাশরের ময়দানের অবস্থা কিরুপ হবে, যিনি আল্লাহ তায়ালার হুকুমের মান্যকারী তিনি নেয়ামত ভোগ করতে থাকবে। আর যিনি আল্লাহ তায়ালার নাফারমানি করেছেন তিনি কবরে শাস্তি ভোগ করবেন। আর এ অনন্তকালের কবরের জিন্দেগি পুনরুত্থান পূর্ববর্তী দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ব্যাপ্তি থাকবে।
কবরের পুরষ্কার - কবরের শাস্তি ও পুরষ্কার
কবরের শাস্তি ও পুরষ্কারের হাশরের ময়দানের অবস্থা কিরুপ হবে সত্যতা পবিত্র কুরআন ও হাদিসে প্রমানিত। মুমিন মুসলিমগন কবরের প্রশ্নোত্তর পর্বে উত্তীর্ন হয়ে শান্তিতে থাকবে। কবরের শাস্তি ও পুরষ্কার, কিয়ামত পর্যন্ত সে শান্তিতে ঘুমিয়ে থাকবে।
হাদিসে বর্নিত রয়েছে, অতঃপর একজন ঘোষনা করবে, তাঁর জন্য জান্নাতি বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতি বিছানা বিছিয়ে দেওয়া হবে ও জান্নাত উন্নুক্ত করে দেওয়া হবে। কবরের শাস্তি ও পুরষ্কার, হাশরের ময়দানের অবস্থা কিরুপ হবে, ফলে তার কাছে জান্নাতের শাস্তি ও সুবাস আসতে থাকবে। (আবু দাউদ)
কবরের আযার - কবরের শাস্তি ও পুরষ্কার
কবরের শাস্তি ও পুরষ্কার হাশরের ময়দানের অবস্থা কিরুপ হবে সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে আমরা মৃত্যুর পরের জগৎ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা লাভ করতে পারি। তার মধ্যে কবরের আযার অন্যতম। সে-সম্পর্কে ইমামে আজম আবু হানিফা (রাঃ) বলেন, মুনকার ও নাকিরের প্রশ্ন সত্য, যা কবরে করা হবে আর কবরে বান্দার রুহকে দেহে ফিরিয়ে দেওয়া টাও সত্যি। কাফেররা সকলেই সেই শাস্তি ভোগ করবে এবং মুসলমানদের মধ্যে পাপী কিছু বান্দাও তা ভোগ করবে।
কুরআনে এসেছে,
ফেরাউনের সম্পদায়গন কঠিন শাস্তি পরিবেষ্টন করল। সকাল সন্ধ্যা তাদেরকে উপস্থিত করা হয়। আগুনের সামনে ও সেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে। কবরের শাস্তি ও পুরষ্কার, হাশরের ময়দানের অবস্থা কিরুপ হবে, সেদিন বলা হবে ফিরাউনের সম্প্রদায়কে কঠিন শাস্তির মধ্যে প্রবেশ করাও।
আবার, যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা শাশ্বত বানীতে সুপ্রতিষ্টিত রাখবেন ইহজীবন ও পরজীবন বা যারা জালেম আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে বিভ্রান্তিতে রাখবেন। আল্লাহ তায়ালা যা ইচ্ছা তা করেন। (সূরা ইব্রাহিম আয়াত নং- ২৭)
মৃত্যুর পর পুনরুত্থান
কবরের শাস্তি ও পুরষ্কার হাশরের ময়দানের অবস্থা কিরুপ হবে সত্য তেমনি মৃত্যুর পর পুনরুত্থান সত্য। এই সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে, যখন শিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে তখন তারা কবর থেকে ছুটে আসবে তাদের প্রতিপালকের দিকে। তারা শুধু বলবে আল্লাহ আমার কি হবে আমার কি হবে।
ইমাম আহমাদ (র) বলেন, আমি রাসুল (সাঃ) এর নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মৃতদেরকে আল্লাহ তায়ালা কীভাবে পুনরুত্থান করবেন? রাসুল (সাঃ) বলেন, তুমি কি কখনো শুষ্ক প্রান্তর অতিক্রম করেছো? তারপর ঐ ভূমি সতেজ শ্যামল হওয়ার পর কি তুমি তা পুনরায় অতিক্রম করেছো? আমি বললাম, জি হ্যাঁ। এরপর রসুল (সাঃ) বলেন, এমনটাই পুনরুত্থান।(আহমদ)
হজরত জাবির (রাঃ) থেকে অপর এক বর্ণনায় রয়েছে যে, রসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন, প্রত্যেক বান্দা যে অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে সে অবস্থায়ই সে উত্থিত হবে।(আহমদ ও বুখারি)
হাশর ময়দানের অবস্থা
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার জীবন সংকীর্ণ হয় এবং কিয়ামতের দিন তাকে অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করা হবে।(সুরা ত্বহাঃ১২৪)
আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন- পৃথিবীতে বিচরিণশীল যত প্রানি আছে এবং ডানায় ভর করে উড্ডায়নশীল যত পক্ষীকুল রয়েছে তা তো সবই তোমার মত এক প্রজাতি।
আরো ইরশাত হয়েছে, আমি কোন কিছুই বাদ দেইনি। অবশেষে তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের সমীপে সমবেত করা হবে।(সূরা আনআম আয়াত নং-৩৮)
আরো ইরশাদ হয়েছে, আমি তাদেরকে একত্রে সমবেত করবো। তাদের কাউকে ছেড়ে দেব না। (কাহাফ-৪৭)
রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন মানুষের হাশর হবে পরিচ্ছন্ন থালা সদৃশ স্বচ্ছ ও শুব্ভ জমিনে, যার মধ্যে কারো কোন প্রতিকি চিহ্ন থাকবে না।(বোখারি ও মুসলিম)
হাশরের ময়দান সম্পর্কে পশ্ন উত্তর (FAQ)
প্রশ্নঃ কেমন হবে হাশরের ময়দান?
উত্তরঃ কোরআনের সাথে হাশরের ময়দান ভয়াবহ। কেননা হাশরের ময়দানে সূর্য মাথার থেকে আধ হাত উপরে থাকবে এবং সেদিন পায়ের তলার জমিন হবে তামা। আরবিতে যেগুলোকে একত্রিত করে বইয়ের ভিতরে জমা করা হয়েছে।
প্রশ্নঃ হাশরের ময়দানের অবস্থা কেমন হবে?
উত্তরঃ হাশরের দিনে মানব মানবদণ্ডগুলোকে লাল জাতীয় কিছু মিশিয়ে পরে তা ভূমিতে একত্রিত করে দেওয়া হবে। যেন তা আটার রুটির মত হয়ে থাকে। তবে সেই জমিনে কারো চিহ্ন থাকবে না। আল্লাহ জমিনকে এমন সমতল মিশ্রণসমত ময়দান হিসেবে পরিণত করবেন যার কারণে কেউ তার বক্রতা বা উচ্চতা দেখতে পারবেনা। (সূরা-তাহা আয়াত নং ১০৬-১০৭)
প্রশ্নঃ হাশরের ময়দানে সবাই কি করবে?
উত্তরঃ কুরআন ও হাদিসে এসেছে যে, সবাই সেদিন বলবে আমাকে বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও। এবং তার ভিতরে মাত্র একজন তার উম্মতকে নিয়ে চিন্তা করবেন তিনি হলেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম। সেদিন কেউ কারো হবে না। কেউ কাউকে নিয়ে চিন্তা করবে না একমাত্র মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ব্যাতিত।
প্রশ্নঃ হাশরের ময়দানে কারা আরশের ছায়ায় জায়গা পাবে?
উত্তরঃ হাশরের ময়দানের অবস্থা কঠিন হবে। তবে তার ভেতর সাত শ্রেণীর মানুষ আরশের ছায়ায় জায়গা পাবে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন আল্লাহ সাত শ্রেণীর মানুষকে আরশের ছায়া জায়গা দেবেন। আর সেদিন তার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না।
প্রশ্নঃ হাশরের ময়দানে সুপারিশ কারা কারা করতে পারবে?
উত্তরঃ হাশরের ময়দানে সবাই সুপারিশ পাওয়ার আশায় একে অপরের কাছে ছুটতে থাকবে। তবে সেদিন কেউ সুপারিশ করতে পারবে না একমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ব্যতীত। আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত সেখানে কেউ আল্লাহর সামনে মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারবেন না।
শেষ কথা - হাশরের ময়দানের অবস্থা কিরুপ হবে
আমরা আল্লাহ তায়ালার আদেশকৃত বিষয়াবলি সবসময় মেনে চলবো ও কবেরর শাস্তির হাত থেকে আল্লাহ তায়ালার কাছে পানাহ চাইব। হাশরের ময়দানের অবস্থা কিরুপ হবে, তাহলে পরম ও দয়ালু হিসাবে তিনি আমাদের ক্ষমা করবেন। উক্ত আলোচনা দ্বারা সুষ্পষ্ট হয় মৃত্যুর পর বান্দার নিকট থেকে মুনকার ও নাকির ফেরেস্তাদের মাধ্যমে আল্লাহ তাদের সকল কৃতকর্মের হিসাব নিবেন। সুতরাং আমাদের উচিত সর্বদা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশিত পথে চলা।
আরো অন্যান্য পোস্ট পড়তে এখানে ক্লিক করুণ
উক্ত পোষ্ট দ্বারা আপনি কবর, মিযান, হাশর ও সম্পর্কে কেমন যানলেন তা কমেন্টের মাধ্যমে যানাবেন। এবং একটি শেয়ার দিয়ে আপনার বন্ধুদের দেখার সুযোগ করে দিবেন।
শামিম বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url